ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই) এর মহাপরিচালক পদে গত ১৮-০২-২০১৬ তারিখ যোগদান করেন। উক্ত পদে যোগদানের পূর্বে তিনি ইনস্টিটিউটের পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) এবং ময়মনসিংহস্থ স্বাদুপানি কেন্দ্র, বাগেরহাট চিংড়ি গবেষণা কেন্দ্র এবং চাঁদপুরস্থ নদী কেন্দ্রের চীফ সায়েন্টিফিক অফিসারসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন।
ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ থেকে ১৯৮৪ সালে মাৎস্য বিজ্ঞানে স্নাতক এবং ১৯৮৫ সালে মৎস্য চাষ ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেন। পরবর্তীতে তিনি ১৯৮৮ সালের ৯ ফেব্রুয়ারী বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা পদে ইনস্টিটিউটে যোগদান করেন। অতঃপর জাপান সরকারের মনবুসো (Monbusho) বৃত্তি নিয়ে জাপানের নাগসাকি বিশ্ববিদ্যালয় হতে ২০০০ সালে মৎস্য বিজ্ঞানে (Food Hygiene) পিএইচডি ডিগ্রী ও ২০০৩ সালে JSPS (Japan Society for The Promotion of Science) বৃত্তি নিয়ে পোষ্ট ডক্টোরেট করেন।
পেশাগত জীবনে ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ জাতীয় চাহিদার নিরীখে গবেষণা পরিচালনা ও নেতৃত্ব প্রদানে গৌরবজনক অবদান রেখে আসছেন। তাঁর মেয়াদকালে গবেষণা ক্ষেত্রে ইনস্টিটিউটের বিশেষ অগ্রগতি ও সফলতা অর্জিত হয়েছে। উদ্ভাবিত হয়েছে অনেক নতুন নতুন প্রযুক্তি । তাঁর নেতৃত্বে অগ্রাধিকারভিত্তিক গবেষণা পরিচালনা করে অনেক বিলুপ্তপ্রায় মাছের প্রজনন ও চাষ কৌশল উদ্ভাবন করা হয়েছে। ফলে বিগত ১২ বছরে চাষে এসব মাছের উৎপাদন ৪ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে ২০২০-২১ সালে ২.৬ লক্ষ মে. টনে উন্নীত হয়েছে। দেশীয় মাছ সংরক্ষণের লক্ষ্যে ২০২০ সালে ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ দেশে প্রথমবারের মত ইনস্টিটিউটে মাছের লাইভ জীন ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন। প্রাকৃতিক জলাশয়ে কোন মাছ হারিয়ে গেলে এ ব্যাংকে সংরক্ষিত মাছ থেকে তা কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হবে।
তাছাড়া, অন্ত:প্রজনন সমস্যা দূরীকরণ ও রুই মাছের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে তাঁর নেতৃত্বে জেনেটিক গবেষণার মাধ্যমে ইনস্টিটিউট হতে ২০২০ সালে অধিক উৎপাদনশীল রুই মাছের উন্নত জাত (৪র্থ প্রজন্ম) উদ্ভাবন করা হয়েছে যা দেখতে আকর্ষণীয় ও স্থানীয় জাতের চেয়ে ২০.১২% অধিক উৎপাদনশীল। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে উদ্ভাবিত এই উন্নত জাতের রুই মাছ ‘বিএফআরআই সুবর্ণ রুই’ হিসেবে নামকরণ করা হয়েছে । ‘সুবর্ণ রুই’ মাঠ পর্যায়ে সম্প্রসারণের লক্ষ্যে গত ১০ জুন ২০২১ তারিখে আনুষ্ঠানিকভাবে অবমুক্ত করা হয়েছে। সুবর্ণ রুই ব্যবহারের ফলে দেশে বছরে প্রায় ০১ লক্ষ টন বেশি রুই মাছ উৎপাদিত হবে যার বাজার মূল্য ৩ হাজার কোটি টাকা।
অপরদিকে, মুজিববর্ষ উদযাপন উপলক্ষ্যে ড.ইয়াহিয়া মাহমুদ এর প্রস্তাবনার ভিত্তিতে সরকার দেশে রুই জাতীয় মাছের একমাত্র প্রাকৃতিক প্রজননক্ষেত্র হালদা নদীকে “বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ” হিসেবে ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারী করেছে। এতে হালদা নদীর মৎস্যসম্পদ সুরক্ষিত হবে এবং রুই জাতীয় মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন নিশ্চিত হবে যা মাৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে।
অপ্রচলিত মৎস্যসম্পদ যেমন মিঠাপানির ঝিনুকে ইমেজ মুক্তা উৎপাদন, সীউইড, শামুক-ঝিনুক, কাঁকড়া, গ্রীন মাসেল ও ওয়েস্টারের এর প্রজনন ও চাষ, ৪৬৪ প্রজাতির সামুদ্রিক মাছের ক্যাটালগিংসহ মৎস্যসম্পদ উন্নয়নে তাঁর নেতৃত্বে সময়োপযোগী পরিকল্পনা গ্রহণ ও নিবিড় গবেষণা পরিচালিত হয়। এসব প্রযুক্তি উদ্ভাবিত হওয়ায় সুনীল অর্থনীতির ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হবে।
তিনি বাগেরহাটস্থ চিংড়ি গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক হিসাবে উক্ত কেন্দ্র প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন এবং ২০১০ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক উক্ত কেন্দ্রটি উদ্ভোধন করা হয়।
দেশ/বিদেশের বিভিন্ন জার্ণাল/সাময়িকীতে তাঁর ১২৬ টি গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। মৎস্য বিষয়ে তিনি এখনো বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক/সাময়িকীতে নিয়মিত লেখালেখি এবং টিভি টকশোতে অংশগ্রহণ করেন। তিনি ছাত্র জীবনে সাংবাদিকতার সাথে জড়িত ছিলেন।বিভিন্ন সামাজিক ও পেশাজীবি সংগঠনের সাথে তিনি জড়িত। তিনি কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটের আজীবন সদস্য। তিনি বাংলাদেশ একাডেমি অব এগ্রিকালচার (BAAG) এর একজন ফেলো।
পেশাগত বিভিন্ন সভা/প্রশিক্ষণ/কর্মশালায় অংশগ্রহণের জন্য তিনি ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, ইতালী, নেদারল্যান্ড, জাপান, নরওয়ে, দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন, ভারত, নেপাল, ইরান, মিশর, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, চীন, ভিয়েতনাম, জার্মানী, বেলজিয়াম, লুক্সেমবার্গ ও শ্রীলংকা ভ্রমণ করেছেন।
বর্তমান মহাপরিচালকের মেয়াদে গবেষণা ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট সম্মানজনক ‘একুশে পদক ২০২০’ সহ ‘কেআইবি কৃষি পদক’, ‘মার্কেন্টাইল ব্যাংক পদক’, ‘বাংলাদেশ একাডেমি অব এগ্রিকালচার’ পদক ও ‘আরটিভি- এনআরবিসি ব্যাংক পদক’ অর্জন করেছে।
তাঁর জন্মস্থান ময়মনসিংহ জেলার ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার সৈয়দ ভাকুরী (শেখ বাড়ী) গ্রামে। তাঁর স্ত্রী ড. মোহসেনা বেগম তনু একই ইনস্টিটিউটে চীফ সায়েন্টিফিক অফিসার হিসেবে কর্মরত আছেন। তিনি ২ সন্তানের জনক।